মাদকের অন্ধকার জগতে চলছে ছদ্মবেশী মাদক মাফিয়াদের রাজত্ব। তারা বৈধ ব্যবসার আড়ালে নিয়ন্ত্রণ করছেন মাদকের অন্ধকার জগৎ। ইয়াবা ও আইসের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে খ্যাত কক্সবাজার জেলায় রয়েছেন এমন ২৭ ছদ্মবেশী মাদক মাফিয়া। যাদের শীর্ষ মাদক কারবারি হিসেবে চিহ্নিত করে এরই মধ্যে গ্রেপ্তারের জন্য তৎপরতা শুরু করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় গোয়েন্দা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, মাদক কারবারিদের একটি সমন্বিত তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকায় পেশাদার মাদক কারবারির পাশাপাশি বিভিন্ন পেশার ছদ্মবেশী মাদক কারবারি রয়েছেন। তালিকায় থাকা কয়েকজন মাদক কারবারিকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে কথা হয় কক্সবাজারে কর্মরত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে।
তারা জানান, কক্সবাজার ও টেকনাফের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ ইয়াবার পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তারা মিয়ানমার থেকে আমদানির আড়ালে ইয়াবার ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ ধরনের ব্যবসায়ীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। জানা যায়, মাদকের ট্রানজিন্ট পয়েন্ট কক্সবাজারের ছোট-বড় মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন কয়েক শত।
তাদের মধ্যে শীর্ষ মাদক কারবারি রয়েছেন ১২১ জন। সম্প্রতি সময়ে কয়েকটি সংস্থা মিলে কক্সবাজার ও টেকনাফের শীর্ষ ১২১ মাদক মাফিয়ার তালিকা তৈরি করেছে। তালিকায় থাকা মাদক মাফিয়াদের মধ্যে ২৭ জন বৈধ ব্যবসার পাশাপাশি মাদকের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। ইয়াবা ব্যবসাকে আড়াল করতেই মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি এবং বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে তাদের। নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের মাদকের অন্ধকার জগৎ।
তালিকায় থাকা মাদকের পৃষ্ঠপোষকদের একজন টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপের সাবরাং এলাকার জিয়াবুল হক প্রকাশ জিয়া। তার প্রকাশ্য ব্যবসা লবণ ও মাছের প্রজেক্ট। আড়ালে তিনি করেন ইয়াবার পৃষ্ঠপোষকতা। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় রয়েছে মাদক মামলা। টেকনাফ উপজেলার ঘড়িয়াপাড়া হোয়াইক্যং এলাকার নুর প্রকাশ বার্মাইয়া নুর পেশায় ব্যবসায়ী হলেও গোপনে তিনি ইয়াবার পৃষ্টপোষক। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় রয়েছে মাদক মামলা। একই এলাকার জাহেদ হোসেনের রয়েছে হার্ডওয়ারের দোকান এবং লবণ চাষ। তিনি ব্যবসার আড়ালে করেন ইয়াবা কারবার। তার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক মামলা। টেকনাফ ছোট হাবিবপাড়া এলাকার হারুন অর রসিদ পেশায় ব্যবসায়ী হলেও আড়ালে করেন ইয়াবা কারবার। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মাদক মামলা রয়েছে। টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার শুক্কর আলী প্রকাশ্যে ব্যবসা থাকলেও আড়ালে তিনি করেন ইয়াবার কারবার। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় রয়েছে মাদক মামলা। টেশনাফের মিঠাপানির ছড়া এলাকার সাইফুল ইসলাম প্রকাশ কেরা বশির ব্যবসার আড়ালে করেন ইয়াবা কারবার। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় রয়েছে মাদক মামলা। একই ভাবে ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা কারবার করেন টেকনাফ নাইট্যপাড়ার আবদুল রহমান, আবদুল হামিদ, হ্নীলাদরগা এলাকার রফিক, মোছনী ক্যাম্প নয়াপাড়া এলাকার ছৈয়দুল আমিন। তাদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও ব্যবসার আড়ালে ইয়াবার পৃষ্টপোষকতা করেন এমন মাদক মাফিয়াদের মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার আবদুল করিম, কক্সবাজার সদর পৌরসভার ছৈয়দুল হক, একই এলাকার নবাব মিয়া, সাহাব উদ্দিন, আবদুল কালাম, জসিম উদ্দিন। মহেশখালী উপজেলার সাহাব উদ্দিন, তৌহিদ জাহেদ, টেকনাফের বাদশা মিয়া, রামু উপজেলার আজিজ মাওলা, মংহ্লা রাখাইন, মো. হোছন অন্যতম। শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় থাকা ব্যবসায়ীদের একজন টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং এলাকার জাহেদ হোসেন। তিনি বলেন, আমি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। মৌলভী বাজার এলাকায় আমার একটি হার্ডওয়ারের দোকান আছে। পাশাপাশি লবণ চাষ করি। সোর্সকে টাকা না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মাদক মামলা দেওয়া হয়েছে। পরে দেখি শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায়ও আমার নাম উঠে আছে। একই বিষয়ে জানতে শাহপরীর দ্বীপের সাবরাং এলাকার জিয়াবুল হক প্রকাশ জিয়া এবং টেকনাফের হারুন উর রসিদের মোবাইলে ফোন করা হলেও মোবাইল বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরের শুরুতে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
জুলাই মাসে তালিকা তৈরির কাজ শেষ হয়। তালিকাভুক্ত মাদক মাফিয়াদের গ্রেপ্তার করতে এরই মধ্যে অভিযান শুরু করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গ্রেপ্তারও হয়েছেন। সুত্র: বিডিপ্রতিদিন
পাঠকের মতামত